ঢাকা, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫, ৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

নব্বই দশকের স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড

নব্বই দশকের স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড

বিশ্বজুড়ে স্কিন কেয়ার বাজার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। সঙ্গে উৎপাদনেও এসেছে অনেক আধুনিকতা। এই বাজার আরও বাড়াতে বিশেজ্ঞরা আঁটছেন নতুন নতুন ফন্দি, অবলম্বন করছেন নানা পন্থা। এই প্রতিযোগিতার বাইরে আমরাও পিছিয়ে নেই। আমাদের দেশের প্রসাধনীর বাজার ও উৎপাদনেও উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে আছে। এই বাজারে আমাদের স্কিন কেয়ার পণ্যের অবস্থানটা শক্ত হয়েছে নব্বই দশক থেকে। তখন থেকেই দেশীয় স্কিন কেয়ার কোম্পানিগুলো দেশের বাজারের ৪০ শতাংশ দখলে রেখেছিলো। আজ আমরা নব্বই দশকের দেশীয় স্কিন কেয়ার কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানবো-

single-ad-main-1

১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা কোহিনূর কেমিক্যালসের। এ ক্ষেত্রে কোহিনূর কেমিক্যালসে আদি ও ভরসার পণ্য তিব্বত পমেড। শীতের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সৌন্দর্যসঙ্গী ছিলো এই পেট্রোলিয়াম জেলি। এই প্রতিষ্ঠানের আরও একটি পুরোনো অথচ গুণমানে চমৎকার পণ্য হলো তিব্বত স্নো। এ ছাড়া আছে তিব্বত লাক্সারি সাবান ও ট্যালকম পাউডার, স্যান্ডেলিনা সাবান, বিউটিনা ফেসওয়াশ, বডি লোশন ও হেয়ার অয়েল। লিপবাম, পেট্রোলিয়াম জেলি, ঘামাচি পাউডারও আছে। তবে ১৯৮৮ সালে সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।  এছাড়াও ঘামাচি পাউডার মিল্লাত ঘামাচি পাউডারও তাদের উল্লেখযোগ্য একটি পণ্য ছিলো।

নব্বইয়ের শুরুতে  স্কয়ার টয়লেট্রিজ বাজারে বাজারে আনে মেরিল স্প্রিং রেইন শ্যাম্পু। সেটাই বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের তৈরি প্রথম কন্ডিশনারসহ শ্যাম্পু ছিলো। আর ওই শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করেছিলেন মৌসুমী। সেই বিজ্ঞাপনে ঝলমলে চুলে সাদা পোশাকে তিনি ছিলেন অনন্যা। তাই এই শ্যাম্পু তখনকার তরুণ-তরুণীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সমর্থ হয়। স্কয়ারের পণ্যের বৈচিত্র্য আর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও, সময়ের সাথে হারিয়ে যায় নব্বই দশকের সেই শ্যাম্পু।

স্কয়ারের পণ্যতালিকায় ধীরে ধীরে যুক্ত হয় রিভাইভ ব্র্যান্ডের ট্যালকম পাউডার, লোশন ও শ্যাম্পু, মেরিল ব্র্যান্ডের মিল্ক সোপ, পেট্রোলিয়াম জেলি, লিপবাম, অলিভ অয়েল, লিপজেল, গ্লিসারিন, জুঁই নারকেল তেল, কুল ব্র্যান্ডের ডিওডোরেন্ট বডি স্প্রে, শেভিং ফোম, শেভিং ক্রিম আর আফটার শেভিং জেল ও লোশন। এ ছাড়া আছে মেরিল ব্র্যান্ডের বাচ্চাদের সাবান, শ্যাম্পু, লোশন ইত্যাদি। তাদের তালিকায় আরও যোগ হয়েছে রেইন শাওয়ার জেল।

single-ad-main-2

নব্বইয়ের দশকে আরও একটি শ্যাম্পু ধূমকেতুর মতো উদয় হয়েই মিলিয়ে যায়। নাম বাউন্স। এটা বাংলাদেশি কি না, সেটাও এখন আর বলা সম্ভব নয়। তবে এটা এখনও সেই সময়ের মানুষের মনে থাকার কারণ এর মজাদার বিজ্ঞাপন। যেখানে সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন।

কাছাকাছি সময়ে ১৯৯৩ সালে বাজারে শোরগোল ফেলে দেয় যমুনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অ্যারোমেটিক কসমেটিকের একটি সাবান। শুরুতেই তারা বাজারে আনে অ্যারোমেটিক সাবান। তাঁর ইউনিক সেলিং পয়েন্ট ছিল একটি শব্দ। সেটা হলো – -হালাল। সেই সময় সেটা অভিনবই কেবল নয়, ইনোভেটিভও ছিল। সাবানটি তখন কেবল বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী ভারতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বাংলাদেশে তখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল লাক্স। এর মার্কেট শেয়ারে ভাগ বসিয়ে ১৪ শতাংশ দখল করে নেয় তারা। শুরুতে ওই সাবানের সব ধরনের বিজ্ঞাপনের মুখ হয়ে ওঠেন নবাগত রুমানা। সেই সময়ে এই সাবানের বিজ্ঞাপন করে রুমানা হয়ে ওঠেন  হার্টথ্রব টিভি মডেল।

১৯৯৬ সালে আসে আরও একটি কোম্পানি—কেয়া কসমেটিকস। বাজারে আসে নানা পণ্য। এর মধ্যে বেশি জনপ্রিয়তা পায় কেয়া সাবান। মৌ ও নোবেল ছিলেন সেই পণ্যের মডেল। সেই সময়ে তরুণ-তরুণীদের হার্টথ্রব জুটি হয়ে ওঠেন মৌ ও নোবেল।

১৯৯৬ সালে আরও একটি প্রতিষ্ঠান বাজারে আনে একাধিক সৌরভের ম্যাগনোলিয়া সাবান।। এই পণ্যের কোথাও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ মুদ্রিত থাকত না। এই সাবানের সিংহভাগ রপ্তানি হতো ভারতে।

একসময় জিল লিমিটেডের লিলি সাবানও বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলো। কিন্তু এখন আর চোখে পড়ে না। এটাই আসলে আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর দুর্ভাগ্য।

বিদেশে আমরা দেখি, বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকে পণ্য, উদ্‌যাপন করে শতবর্ষ, দ্বিশতবর্ষ। অথচ আমাদের এখানে ঝলক দেখিয়েই মিইয়ে যায়, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না।

আশার কথা দিয়ে শেষ করি। বর্তমানে দেশীয় তরুন ও পুরনো উদ্যোক্তারা স্কিন কেয়ার বাজার আবারও নিজেদের দখলে নিতে বদ্ধপরিকর। দেশেই বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা শুরু করেছে বেশ কিছু ব্র্যান্ড। যেখানে দেশের তরুণ ও স্কিন বিশেষজ্ঞরা তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। যাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে স্কিন-কেয়ার বাজারের পুরনো  আধিপত্যকে ফিরিয়ে আনা। এর মাঝে চারদিকে, রিমার্ক, হারল্যান উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ড।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন