ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ৪:০১ অপরাহ্ন

  • ফিচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ৩:১০ অপরাহ্ন
border-bd-india

পরস্পরকে জড়িয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছা, কিন্তু মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। সীমান্তে এভাবেই সাক্ষাৎ দুই বাংলার মানুষের (ছবি : তানভীর)

কাঁটাতারের বেড়ার এপারে কয়েক হাজার বাংলাদেশি। ওপারে কয়েক হাজার ভারতীয় বাঙালি। তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন, কুশল বিনিময় করছেন। কেউ কেউ কাঁটাতারের ওপর দিয়ে বিস্কুট, চানাচুর ছুড়ে দিচ্ছেন একে অপরকে। কেউবা আত্মীয়স্বজনকে দেওয়ার জন্য ঠান্ডা পানীয়র বোতল ছুড়ছেন। এমন আবেগঘন পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলছেন। তবে সে কান্না দুঃখের নয়, মিলনের।

শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া সীমান্তে। নাগর নদের পাড়ে প্রতিবছরের মতো এবারও বসছিল দুই বংলার মানুষের মিলনমেলা।

সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা জানান, ভারত আর বাংলাদেশের যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এই দিনে তারা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন।

সকাল থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এসে জড়ো হন সীমান্তে। দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা আত্মীয়স্বজন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কেউ মায়ের সঙ্গে, কেউ বা বোনের অথবা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ পান।

ভালোবাসা আর মমতায় দুই দেশের অগণিত মানুষের এ মিলনমেলায় আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এ দেশের অনেকে ভারতীয় অংশে রয়ে যান। আলাদা দুটি দেশ হওয়ার ফলে অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তারা উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অলিখিত সম্মতিতে প্রতিবছর এই সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান।

ধর্মপুর গ্রামের পান্না লাল রায় এসেছেন মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। শিলিগুড়িতে থাকা মেয়ে রিনা রানীকে ১১ বছর ধরে দেখেন না বাবা পান্না লাল। এবার এত ভিড়ের মধ্যে জামাই-মেয়ের মুখ দেখতে পারেননি তিনি। তাই উপায় না পেয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তারা।

কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের সাদেকুল তার ভাই সেরেকুল ইসলামকে দেখলেন পাঁচ বছর পর। ইচ্ছা ছিল বুকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু মাঝখানে যে কাঁটাতারের বেড়া!

উষা ও নিরালার ভাই বিশ্বনাথ থাকেন শিলিগুড়িতে। ভাইয়ের জন্য পিঠা এনেছেন। কথা হলেও নিজ হাতের তৈরি পিঠা দিতে পারেননি। তবুও দেখার আনন্দ নিয়ে বিদায় নিলেন তারা।

রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর থেকে মাধবী রানী এসেছেন ভারতের কাকরমণি গ্রামে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মাধবী বলেন, ‘বিয়ের পর এই প্রথম মাকে দেখলাম। তবে তেমন কথা হয়নি। অসুস্থ মাকে একনজর দেখে এলাম। এখন একটু ভালো লাগছে।’

হরিপুর আমগাঁও থেকে আসা ইছাহাক আলী জানান, ২২ বছর পর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। বছরে অন্তত একটা দিন এরকম হইলে ভালো হয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির তনজিনা এসেছেন হরিপুরে তার বোন তাসলিমা বেগমের সঙ্গে দেখা করতে। যখন দেখা হলো দুজনের চোখে বেয়ে গড়িয়ে এল পানি। তারপর ছেলেমেয়ের বিষয়ে দুজন দুজনার খোঁজখবর নিলেন।

দিনাজপুরের দলুয়া থেকে চঞ্চলা রানী এসেছেন মেয়েজামাইকে দেখতে। মা বাবাকে দেখতে ঠাকুরগাঁয়ের ভুল্লী থেকে এসেছেন চম্পা। দেখা করতে পেরে সকলেই খুশি।

হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয়স্বজন দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর এদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেন না। অপেক্ষা করেন এই দিনের।

" data-width="100%" data-numposts="5">